এইডস একটি আর্থ- সামাজিক ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশেও এইডস-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে এটি এখনও মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কারণে অচিরেই আমাদের দেশেও এইডস মারাত্মক রূপ নিতে পারে। যেহেতু প্রতিকারহীন এ রোগের চরম পরিণতি মৃত্যু, তাই সকলকে বিশেষ করে কিশোরী বা অল্পবয়সী মেয়েদেরকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের কিশোরীরাই কিশোরদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর প্রধান কারণসমূহ হচ্ছে-
১। আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে মেয়েদের দুর্বল অবস্থান।
২। মেয়েরা এইচআইভি/এইডস বিষয়ে ছেলেদের তুলনায় কম অবহিত।
৩। নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণে পুরুষ দ্বারা মেয়েদের নিগৃহীত হওয়া।
৪। মেয়েদের অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধাদানের ক্ষমতার অভাব।
৫। মেয়েদের বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য।
৬। অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে তাদের চিন্তা ও আচরণে অনেক কৌতূহল জন্মে। পরিবারের বড়দের কাছে এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারে না। তাই তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ থাকে এবং অনেকে অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ রকম পরিস্থিতিতে তারা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে যায় ।
এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহ : HIV আক্রান্ত মানুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস বীর্যে, যোনিরসে, রক্তে ও মায়ের দুধে বাস করে। এই চার জাতীয় তরল পদার্থের আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমিত হয়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য বা যোনিরস অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হলে এইচআইভির সংক্রমণ ঘটে। এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহ হচ্ছে—
(ক) মাদকগ্রহণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে ইনজেকশনের একই সুচ ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহার ।
(খ) অপরীক্ষিত রক্ত শরীরে গ্রহণ ।
(গ) অপারেশনের সময় অপরিশোধিত জীবাণুযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার।
(ঘ) এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্ৰহণ ৷
(ঙ) অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন।
এইচআইভি এবং এইডস থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকার উপায়
১. ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ : পরিহার করতে হবে।
২. আবেগ প্রশমন : প্রধানত কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়েই কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করে। এজন্য কিশোর-কিশোরীদের কৌতূহল বা আবেগ প্রশমনের দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। বড়দের সাথে বিশেষ করে মা-বাবার সাথে সব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে পারলে এই কৌতূহল দূর ও আবেগ প্রশমিত হয় ।
৩. ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : অনাকাঙ্ক্ষিত বা অনৈতিক প্রস্তাবে ‘না’ বলার দক্ষতা ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
৪. ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলা : নেশা করা বা মাদকাসক্ত হওয়া, অনৈতিক দৈহিক বা শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি কোনো ধর্ম বা সমাজ অনুমোদন করে না। তাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেক কমে যায়।
৫. এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি : এইচআইভি এবং এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার, র্যালির আয়োজন, ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির ধারক বয়াতির গ্রামীণ পালাগান, পথ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে সহজে উদ্বুদ্ধ করা যায়। এসব কার্যক্রম ব্যক্তির আত্মসচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কাজ-২ : এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল কোনটি তা উল্লেখ করে এর সপক্ষে যুক্তি দাও, শ্রেণিতে দলীয় ভিত্তিতে উপস্থাপন কর। |